Dhaka Biman Durghotona 2025

ঢাকায় ভয়াবহ বিমান দূর্ঘটনা – মৃতের সংখ্যা ১৯ ছাড়িয়ে গেছে। Bangladesh Air Force Training Aircraft Crashes in Uttara

আজ, ২১ জুলাই ২০২৫, সোমবার, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার উত্তরা এলাকায় একটি মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে, যা দেশের বিমান চলাচলের ইতিহাসে আরেকটি বেদনাদায়ক ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফ-৭ বিজিআই মডেলের প্রশিক্ষণ বিমান দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনের উপর ভেঙে পড়ে, যার ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে ১৯ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়েছে, এবং প্রায় ৫০ জন আহত হয়েছেন। তবে, হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে

ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর) জানিয়েছে, দুপুর ২টার দিকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর এই প্রশিক্ষণ বিমানটি উড্ডয়নের মাত্র দেড় মিনিটের মধ্যে দুর্ঘটনার শিকার হয়। বিমানটির পাইলট ছিলেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর, এবং তিনি বিমানে একাই ছিলেন। দুর্ঘটনার পর বিমানটি জ্বলন্ত ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়, এবং কলেজ ভবনের একটি অংশ ভেঙে পড়ে। ঘটনাস্থলে ধোঁয়া এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা চিৎকার-চেঁচামেচি ও ভয়াবহ দৃশ্যের বর্ণনা দিয়েছেন।

দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজ অবিলম্বে শুরু হয়েছে। আহতদের মধ্যে অন্তত ৬০ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এবং ৫ জনকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়েছে। উদ্ধারকারী দল এবং স্থানীয় প্রশাসন ঘটনাস্থলে তৎপর রয়েছে, এবং তথ্য আদান-প্রদানের জন্য একটি হটলাইন চালু করা হয়েছে।

এই মর্মান্তিক ঘটনায় বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গভীর শোক প্রকাশ করেছে। ভারতীয় হাইকমিশন ঢাকায় এক বিবৃতিতে বলেছে, “ঢাকায় এই মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনায় আমরা গভীরভাবে মর্মাহত ও দুঃখিত। নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। ভারত বাংলাদেশের পাশে রয়েছে এবং সম্ভাব্য সকল সহায়তা প্রদানের জন্য প্রস্তুত।”

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে বিমানবাহিনীর রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। একজন এক্স ব্যবহারকারী লিখেছেন, “বাংলাদেশ বিমানবাহিনীকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। তাদের অকর্মণ্যতা ও দুর্নীতির জন্য এতগুলো নিরীহ মানুষের প্রাণহানি মেনে নেওয়া যায় না।” এই ধরনের প্রতিক্রিয়া জনমনে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ ও উদ্বেগের ইঙ্গিত দেয়।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী বাংলাদেশের বিমান চলাচলের ইতিহাসে এটি প্রথম দুর্ঘটনা নয়। ১৯৮৪ সালে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে একটি জলাভূমিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফকার এফ ২৭-৬০০ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ৪৯ জন নিহত হয়েছিল। ২০১৮ সালে নেপালের কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ৪৯ জনের প্রাণহানি ঘটে। এই ঘটনাগুলো বাংলাদেশের বিমান চলাচলের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।

আজকের দুর্ঘটনার কারণ এখনও নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। তবে, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, বিমানটি উড্ডয়নের অল্প সময়ের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। যান্ত্রিক ত্রুটি, পাইলটের ভুল, নাকি অন্য কোনো কারণ এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী, তা তদন্তের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে। বাংলাদেশ বিমানবাহিনী এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। এই দুর্ঘটনা বাংলাদেশের বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়া এবং বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থার উপর নতুন করে বিচার বিবেচনা উঠে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আধুনিক প্রযুক্তি এবং কঠোর নিরাপত্তা মানদণ্ডের প্রয়োগ ছাড়া এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করা কঠিন হবে।

সত্যি বলতে আজকের এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ধাক্কা। বিশেষ করে ছোট ছোট শিক্ষার্থীদেরকে আগুনের মধ্যে দিয়ে আহত অবস্থায় হেটে আসতে দেখা গিয়েছে। কেওবা আবার নিহত হয়ে গিয়েছে। মন থেকে নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। বিশেষ করে নিষ্পাপ শিশুদের, তাদের আত্মার শান্তি কামনা করছি। আহতদের দ্রুত আরোগ্য প্রার্থনা করছি। আমি দুর্ঘটনায় শোকাহত পরিবারগুলোর প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই এবং তাদের এই অকল্পনীয় শোকে ধৈর্য ও শক্তি লাভের জন্য প্রার্থনা করি। নিহত শিশুদের শূন্যতা কখনো পূরণ হবার নয়। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সকলকে এই কঠিন সময় পার করার ধৈর্য ও সাহস দান করুন।

এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। জাতি হিসেবে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই দুঃখজনক মুহূর্তে একে অপরের পাশে দাঁড়ানো উচিত। আমরা আশা করি, তদন্তের মাধ্যমে দুর্ঘটনার সঠিক কারণ উদঘাটিত হবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *