Blood-and-Betrayal

Blood and Betrayal: Shadows of Kin

সকালের নরম আলো জানালার ফাঁক দিয়ে এসে পড়ছিল। কিন্তু সেই আলো যেন আজ আর ঘরটিকে উষ্ণ করতে পারেনি। বিছানায় পড়ে আছে তিনটি নিথর দেহ—একজন মা আর তার দুটি নিষ্পাপ শিশু। তাদের মুখে যেন এখনও ঘুমের শান্তি লেগে আছে, কিন্তু সেই শান্তি এখন চিরনিদ্রার। ঘরের বাতাসে ভারী নীরবতা, যেন সময় থমকে দাঁড়িয়েছে। এই ঘরটি একদিন ছিল ভালোবাসার আশ্রয়।

বড় ভাই মোঃ রফিক মিয়া, তার ছোট ভাই নজরুল কে নিজ ঘরে ঠাঁই দিয়েছিল। জেলের ঠান্ডা কংক্রিটের দেয়াল থেকে ছোট ভাই কে মুক্ত করতে বড় ভাই তার সর্বস্ব দিয়ে চল্লিশ হাজার টাকা জোগাড় করে জামিন করিয়েছিল। ভাইয়ের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল অটুট। সে ভেবেছিল, হয়তো একটু ভালোবাসা, একটু সঠিক পথের দিশা দিলে ভাইটি ফিরে আসবে জীবনের মূল স্রোতে। তাই তো সে অলস সময় কাটিয়ে চলা ভাইকে কাজে মন দেওয়ার জন্য তাগাদা দিত, কঠিন কথা বললেও তার মধ্যে ছিল ভাইয়ের ভালো হওয়ার আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু ভাইয়ের মনে কী চলছিল, তা উপড় ওয়ালা ছাড়া কেউ জানত না। তার হৃদয়ে যে অন্ধকার জমাট বেঁধেছিল, তা যেন কোনো আলোর স্পর্শই পায়নি। সেই অন্ধকারই একদিন ফেটে পড়ল নিষ্ঠুরতার রূপে।

এক নির্মম রাতে, যখন ঘরের সবাই ঘুমে আচ্ছন্ন, ছোট ভাই তার আপন বড় ভাইয়ের স্ত্রী আর দুটি ফুটন্ত ফুলের মতো শিশুকে হত্যা করল। কল্পনাও করা যায় না কীভাবে সে এই নৃশংসতা করল। হয়তো মায়ের মুখ চেপে ধরে প্রথমে তার শ্বাস বন্ধ করল, তারপর সেই নিষ্পাপ শিশুদের, যারা কখনো জানলই না কেন তাদের জীবন এভাবে শেষ হল। হত্যার পর ছোট ভাই তার মোবাইল বিক্রি করে পালিয়ে গেছে, পিছনে ফেলে গেছে শুধু মৃত্যু আর শূন্যতা।

এই ঘটনা শুনে শরীর শিউরে ওঠে। মনে হয়, যেন আমার নিজের সন্তানদের কথা ভেবে বুক কেঁপে ওঠে। কীভাবে কেউ এমন নিষ্ঠর হতে পারে? কীভাবে একজন মানুষের মনে এতটা হিংস্রতা জমে উঠতে পারে! এই দেশের মানুষের মধ্যে যেন এক অদ্ভুত অন্ধকার ছড়িয়ে পড়ছে। একটি অসুস্থ মানসিকতা, যেখানে ভালোবাসা, আক্ষেপ, বা মানবিকতার কোনো লক্ষণ নেই। এরা যেন সাইকোপ্যাথে পরিণত হচ্ছে, যাদের কাছে খুন করা কোনো বড় বিষয় নয়। আমরা শারীরিক অসুখ হলে হাসপাতালে ছুটি, কিন্তু মনের অসুখ? সেটাকে আমরা হাসির পাত্র বানাই। অথচ মানসিক অসুস্থতা শারীরিক অসুস্থতার চেয়ে কম গুরুতর নয়।

কেন মানুষের মধ্যে এত ক্রোধ, এত হিংস্রতা? কেন সামান্য কারণে মানুষ খুন করে বসে? কেন প্রতিবাদী হওয়ার নামে এত আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে? ছোট ভাই পালিয়ে গেছে, কিন্তু তার পেছনে ফেলে যাওয়া প্রশ্নগুলো আমাদের তাড়া করে। কোথায় যাচ্ছে আমাদের সমাজ? কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের মানবিকতা? এই অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দিতে হবে, সমাজের এই হিংস্রতার মূল খুঁজে বের করতে হবে। নইলে এই অন্ধকার আরও ঘনীভূত হবে, আরও জীবন শেষ হবে এমন নির্মমভাবে। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দিন আর আমদেরকে ক্ষমা করুন। আমিন।

এই হৃদয় বিদারক ঘটনাটি ময়মনশিংহ জেলার। ঘটনা সম্পর্কে পুলিশি তদন্ত রিপোর্ট টি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

এই নির্মম ঘটনার পরিপেক্ষিতে আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্ট বক্সে লিখে যাবেন।

1 Comment

  1. কিয়ামতের আলামত শুরু হয়ে গেছে…

    নরকের জামানায় বাস করছি ভাই! কে কাকে খুন করছে? কিসের জন্য খুন করছে? যে খুন করছে সে নিজেও জানে না….!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *