শিক্ষার্থীদের জীবন বাচাঁতে বিলিয়ে দিলেন নিজেদের জীবন!
মেহরিন চৌধুরী, উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলের একজন অসাধারণ শিক্ষিকা, যিনি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ২০ জন শিক্ষার্থীর প্রাণ বাঁচিয়েছেন। আগুনে ৮০% দগ্ধ হয়েও তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপদে বের করে আনতে সাহসিকতার সঙ্গে লড়েছেন, তাদেরকে সাহস যুগিয়েছেন। ষ্টুডেন্ট রা যখন দিশেহারা তখন তাদের বলেছেন, “দৌড়াও, ভয় পেয়ো না, আমি আছি।” এই নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগে তিনি প্রমাণ করেছেন, শিক্ষকতা শুধু পেশা নয়, হৃদয়ের দায়িত্ব। দুর্ভাগ্যবশত, ২১ জুলাই ২০২৫-এ তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যান। তাঁর সাহস ও ভালোবাসা চিরকাল আমাদের অনুপ্রাণিত করবে। আমরা দোয়া করি, মহান আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসিব করুন।

গতকাল মেহরিন মিসের অসাধারণ কাজের জন্য যত প্রশংসাই করা হোক, শব্দের ভাণ্ডার যেন ফুরিয়ে আসে। তিনি শুধু একজন শিক্ষক নন, একজন নিঃস্বার্থ যোদ্ধা, যিনি শিক্ষার্থীদের জন্য নিজের সবটুকু উজাড় করে দিয়েছেন। কিন্তু তার পাশাপাশি আরেকজন মহীয়সী নারীর কথা উল্লেখ না করলেই নয়। মেহরিন মিসের অবদানের পাশাপাশি আরেকজন শিক্ষীকার অবদানও সমানভাবে শ্মরনীয় এবং তার কথাও আমাদের মনে রাখতেই হবে। যিনি নীরবে, নিভৃতে, নিজের জীবন দিয়ে শিক্ষার্থীদের বাঁচিয়েছেন—তিনি মাসুকা বেগম নীপু।
মাসুকা ম্যাম যেন জীবনের ভয়কে হারিয়ে দিয়েছিলেন। নিশ্চিত মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও তিনি একের পর এক শিক্ষার্থীকে নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠিয়েছেন। তিনিও চাইলে স্বার্থপরের মত স্কুল ত্যাগ করে নিজের প্রাণ বাঁচাতে পারতেন। কিন্ত তিনি তা করেননি। কিন্তু তিনি লড়েছেন—আগুনের লেলিহান শিখার সঙ্গে, যেন তার প্রিয় শিক্ষার্থীরা, তার আত্মার সন্তানেরা, একটুও আঁচড় না পায়। আগুন তার শরীরে ছড়িয়ে পড়লেও তিনি পিছু হটেননি। এই নারী, এই মা, এই শিক্ষক শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আপন প্রাণকে বাজি রেখে লড়ে গেছেন।
গতকাল রাতে, যখন আগুন তার দেহ গ্রাস করল, তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। কিন্তু তার আত্মা অমর হয়ে রইল আমাদের মাঝে। মেহরিন চোধুরী ম্যামের মত মাসুকা বেগমও আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে গেলেন। তাদের মতো মানুষের চলে যাওয়া শুধু কয়েকটি জীবনের ত্যাগ নয়, এ যেন গোটা দুনিয়ার অপূরণীয় ক্ষতি। দোয়া করি, উপরওয়ালা দুজনকেই জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদায় আসীন করুন। আমিন।
মেহরিন মিস ও মাসুকা ম্যাম—দুজনেই আমাদের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবেন। তাদের বীরত্ব, তাদের নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ কখনো ভোলার নয়। তারাই প্রকৃত বীর, যারা নিজেদের জীবনের চেয়ে শিক্ষার্থীদের জীবনকে বড় করে দেখেছেন।