জাপানে সুনামির আঘাত: হোক্কাইডো উপকূলে ৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত ঢেউ, সতর্কতা জারি করেছে দেশটি।
৩০ জুলাই ২০২৫, টোকিও: জাপানের উত্তরাঞ্চলীয় হোক্কাইডো উপকূলে আজ সকালে সুনামির ঢেউ আঘাত হেনেছে। জাপানের জাতীয় সম্প্রচারমাধ্যম এনএইচকে জানিয়েছে, স্থানীয় সময় সকাল ১০:৪৬ নাগাদ হোক্কাইডোর রিমো টাউনে ৩০ সেন্টিমিটার উচ্চতার সুনামির ঢেউ রেকর্ড করা হয়েছে, যার মোট ঢেউয়ের উচ্চতা ৩ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া, তোচাচি বন্দরে ৪০ সেন্টিমিটার উচ্চতার ঢেউ পরিলক্ষিত হয়েছে। ইশিনোমাকি বন্দরে সর্বোচ্চ ৫০ সেন্টিমিটার উচ্চতার ঢেউ রেকর্ড করা হয়েছে, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। জাপানের আবহাওয়া সংস্থা (জেএমএ) জানিয়েছে, প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল বরাবর দক্ষিণ দিকে অগ্রসরমান এই ঢেউগুলোর মধ্যে ১৬টি স্থানে ৪০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত উচ্চতার ঢেউ রেকর্ড করা হয়েছে।
এই সুনামির কারণ হিসেবে রাশিয়ার কাছাকাছি অঞ্চলে ৮.৭ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পকে দায়ী করা হচ্ছে, যা গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পগুলোর একটি। এই ভূমিকম্পের ফলে জাপানের উত্তরাঞ্চলীয় হোক্কাইডোর হানাসাকি বন্দরে প্রথম ঢেউ আঘাত হানে। আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরও শক্তিশালী ঢেউ আসার আশঙ্কা রয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
জাপানের আবহাওয়া সংস্থা হোক্কাইডো, নিগাতা, এবং অন্যান্য উপকূলীয় অঞ্চলে সুনামি সতর্কতা জারি করেছে। সতর্কতায় বলা হয়েছে, সমুদ্রের ঢেউ ৩ মিটার (৯.৮ ফুট) পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। এনএইচকে জানিয়েছে, ৫০ সেন্টিমিটার উচ্চতার ঢেউ ২০০ কেজি (৪৪০ পাউন্ড) পর্যন্ত শক্তি বহন করতে পারে, যা একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য মারাত্মক হতে পারে। উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের অবিলম্বে উঁচু স্থানে আশ্রয় নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দুর্যোগের তীব্রতা বিবেচনা করে, জাপানের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে বড় অক্ষরে ‘EVACUATE’ শব্দটি প্রদর্শিত হচ্ছে, এবং বাসিন্দাদের ঠান্ডা আবহাওয়া সত্ত্বেও ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে যেতে বলা হচ্ছে। প্রাথমিক প্রতিবেদনে জানা গেছে, ইশিনোমাকি বন্দরে সুনামির ফলে দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, তবে এই তথ্য এখনও সরকারিভাবে নিশ্চিত করা হয়নি।
জাপানের ইতিহাসে সুনামি একটি পুনরাবৃত্ত দুর্যোগ। ২০১১ সালের ৯ মাত্রার ভূমিকম্প ও সুনামিতে প্রায় ১৬,০০০ মানুষ নিহত হয়েছিল এবং ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটেছিল। সাম্প্রতিক এই ঘটনায় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কোনো ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি, তবে কর্তৃপক্ষ সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
জাপান সরকার ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। উদ্ধারকাজ চলছে, এবং জনগণকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পরবর্তী ঢেউগুলোর তীব্রতা এবং সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে আরও তথ্যের জন্য সবাইকে স্থানীয় আবহাওয়া সংস্থা ও এনএইচকের আপডেট অনুসরণ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।